ফিনল্যান্ডকে বলা হয় গ্লোবাল সুপার পাওয়ার ইন এডুকেশন।

ফিনল্যান্ডকে বলা হয় গ্লোবাল সুপার পাওয়ার ইন এডুকেশন।
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাব্যাবস্থা কার বলেন তো?
সুপার পাওয়ার আমেরিকার
নাকি টক্কর দেয়া রাশিয়ার্।
মোটেই না। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ এডুকেশন সিস্টেম হলো ফিনল্যান্ড নামক ইউরোপের ছোট্ট এক দেশের্।
কেন ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যাবস্থা কে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা ব্যাবস্থা বলা হয়?
ওরা কি আমাদের মত আই এম জিপিএ ফাইভ বেশী পায়। আজ্ঞে না।
ফিনিশ বাচ্চারা পড়ালেখা শুরু করার পরের ৬ বছর পর্যন্ত কোন পরীক্ষাই দেয়না। তাদের কে শুধুই শেখানো হয়না। এটাকে বলে এলিমেন্টারি স্কুলিং।
ফিনল্যান্ডে আসলে জাতীয় পরীক্ষা একটাই ১৬ বছর বয়সে দিতে হয়।
ফিনল্যান্ডে কোন ভাল স্কুল খারাপ স্কুল ভাল কলেজ খারাপ কলেজ নেই। যেমন আমাদের দেশে ভিকারুননিসা, হলিক্রস, মনিপুর,নটরডেম ,রাজউক ইত্যাদি এলিট স্কুল কলেজ আছে। আর গ্রামের বেশীরভাগ স্কুল কলেজ সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত ,ভাল শিক্ষকের অভাব। ল্যাবের কথা আর বললাম না।
ওয়েল ফিনল্যান্ড এডুকেশন ইকুয়ালিটিতে বিশ্বাস করে।
এই কারণেই গ্লোবাল এডুকেশন ইনডেক্সে ফিনল্যান্ডের কাছে আমেরিকাও সরম পায়।
ফিনল্যান্ডে শিক্ষকদের বেতন ইঞ্জিনিয়ার ,ডাক্তারদের সমমানের্।ওয়ান অফ দা হায়েস্ট পেইড প্রফেশন। ফিনল্যান্ড সরকার শিক্ষকদের এই পরিমাণ স্বাধীনতা দিয়েছে যে তাদের কে বোর্ড থেকে কোন সিলেবাস ধরে বেধে দেয়না। শিক্ষকরা মনের ইচ্ছামত ক্লাসে পড়াতে পারেন। প্রতিটা ক্লাসের মাঝখানে ১৫ মিনিট থাকে খেলার টাইম। প্রতিটা সায়েন্স ক্লাসে ছাত্র সর্বোচ্চ থাকে ১৬ জন এবং প্র্যাক্টিকাল করা বাধ্যতামূলক। থিউরি কপচানোর টাইম নাই।
ফিনল্যান্ড এডুকেশনের সুপারপাওয়ার হওয়ার পেছনে সবচাইতে বড় কারণ হইতেছে যেইডা সেইডা হইল, এডুকেশন ইকুয়ালিটি। মানে ফিনল্যান্ডে আমাদের দেশের মত ভাল ছাত্র খারাপ ছাত্র আমি এ প্লাস ও গুড ফর নাথিং এই টাইপ এলিটিস্ট বা অভিজাত শিক্ষা ব্যাবস্থা নেই।
ফিনল্যান্ডের যেকোন একটা ক্লাসরুমে কোন ফার্স্ট বয় সেকেন্ড বয় থাকেনা। কারণ ফিনল্যান্ড বিশ্বাস করে শিক্ষার মধ্যে প্রতিযোগিতা আনলে ছাত্রদের মন ছোট হয়ে যায়। তাই ফিনল্যান্ডে কেউ রেজাল্ট খারাপ করে মন খারাপ করেনা।
কারণ সেখানে সবাই ছাত্র। কেউ ভাল না কেউ খারাপ না।
আজ্ঞে এই কারণেই ফিনিশ ছাত্রদের মধ্যে সাকসেস রেশিওর পার্থক্য ওয়ার্ল্ডে সবচাইতে কম। মানে সবাই সাকসেসফুল হয় তারা। কারণ তারা শিক্ষাটা পায় ভয় বিহীন আনন্দের মাধ্যমে। এই সেক্টরে আমেরিকাও ওদের কাছে ফেইল। উফ শিট ফিনিশ ছাত্ররা কোন ছাত্র নাকি ওরা কি গোল্ডেন পাইছে লল।
আর আমাদের শিক্ষামন্ত্রী মাথা চাপড়ায়া বলেন " প্রশ্নফাস হয় নাই। "
কিছুদিন আগে ফেসবুকে পরিচিত এক আপুর মাধ্যমে আমেরিকান এক এলিমেন্টারি স্কুলের পেজে ঢুকলাম। বিশ্বাস করেন স্কুল দেখলে মনে হয় স্বর্গ। আনন্দের জায়গা। ওদের ছাত্রদের জন্য খেলাধুলা বাধ্যতামূলক। প্রতি সপ্তাহে একদিন বাচ্চারা সোশাল ওয়ার্ক করে। যেমন হাসপাতালে দুস্থ মানুষ কে দেখতে যাওয়া , গরীবদের সাহায্য করা ইত্যাদি। জীবে দয়া করে যেই জন এই ভাবসম্প্রসারণ পড়ার চাইতে একদিন সোশাল ওয়ার্ক করলে বাচ্চারা আরো বেশী সত, দেশপ্রেমিক ,সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
আমেরিকা কেন সুপারপাওয়ার? অস্ত্র দিয়া ,নাসা দিয়া। আজ্ঞে না। আমেরিকা সুপারপাওয়ার কারণ তারা তাদের দেশের বাচ্চাদের সেভাবেই গড়ে তুলছে। তাদের শিক্ষাব্যাবস্থাটাই এমন। ইনভেস্টমেন্টটা তারা সেখানেই করছে।
আর আমাদের দেশের শিক্ষাব্যাবস্থার কথা আর বললাম না। দেশ আগাইতেছে। গড়ে উঠছে সেতু,ফ্লাইওভার,আলোকিত হচ্ছে শহর্। বুঝতেসিনা আসল বাশ খাইতেছি শিক্ষাক্ষেত্রে আসল জায়গায়। ক্লাস টু থেকে শুরু করে মেডিকেল ভার্সিটি পর্যন্ত প্রশ্ন ফাস হচ্ছে। অবস্থা এমন এখন অভিভাবকরাও প্রশ্ন খুজে। এইভাবে মোরালি এথিকালি করাপ্টেড একটা জেনারেশন গড়ে তুলতেছি আমরা।
আজ থেকে বিশ বছর পরে বুঝবেন। যখন দেখবেন দেশ আধুনিক হইছে কিন্তু দেশে কোন বিজ্ঞানী নেই ,উদ্ভাবক নেই শুধু আছে লাখ লাখ এ প্লাস আর কোটি কোটি চাকুরিজীবী সেদিন বুঝবেন দেশের কত বড় ক্ষতি এই শিক্ষাব্যাবস্থা করছে।
এবার আসি কাতার নামক এক আরব দেশের শিক্ষাব্যাবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের গল্পে। ২০০০ এর শুরুর দিকে কাতারের আমির আব্দুল্লাহ বিন আল থালি বুঝতে পারলেন আল্লাহর দেয়া তেল আর গ্যাস দিয়া বেশীদিন চলব না। পশ্চিমা বিশ্বের সাথে টক্কর দিতে গেলে লাগব শিক্ষাব্যাবস্থার আমুল পরিবর্তন।
সেট করলেন ভিশন ২০৩০
২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বমানের শিক্ষাব্যাবস্থার লক্ষ। গঠন করলেন কাতার এডুকেশন কাউন্সিল। সেন্টার অফ রিসার্চ ইন এডুকেশন। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করে কাতারি স্কুলিং সিস্টেম কে পরিবর্তন করলেন। আনলেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ। আয়োজন করলেন ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন সামিট ফর এডুকেশন।
আমেরিকার নামকরা বিশ্বমানের ৮ টা ইউনিভার্সিটির সাথে পার্টনারশিপে গিয়ে তাদেরকে রাজি করালেন কাতারে তাদের ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য। টাকা কাতারি সরকার দেবে।
আর আজকে কাতার ওয়ার্ল্ড এডুকেশনের জগতে ওয়ান অফ দা হেভিওয়েট প্লেয়ার।
আর আমাদের একজন অথর্ব শিক্ষামন্ত্রী আছেন। যে এখনো প্রশ্ন আউট হওয়াই ঠেকাতে পারে নাই। এডুকেশন সিস্টেমের রিফরমেশন করবে কি।
আমরা এখনো এ ফর এপল বি ফর বলে আটকাইয়া আছি। রিসার্চ জিনিসটা আমাদের কাছে স্বপ্নের মত। আমাদের ছাত্ররা ভার্সিটিতে পড়ে শুধুমাত্র একটা ভাল চাকরির জন্য, বিজ্ঞানী - উদ্ভাবক হওয়ার জন্য না।
যতদিন বিজ্ঞান কে আপন না করছি,যতদিন এই অতিপ্রতিযোগিতামূলক ছোটলোকি শিক্ষাব্যাবস্থার পরিবর্তন না করছি ততদিন পর্যন্ত এই দেশের সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট হবেনা। বিদেশ থেইকা ইঞ্জিনিয়ার আইনা সেতু বানাইলে সেইডারে ডেভেলপমেন্ট বলেনা। বিদেশে স্যাটেলাইট বানাইয়া আকাশে ছুড়লে সেইটারে উন্নতি বলেনা।
যেদিন এ দেশের ছেলে মেয়েরা এ দেশেই রিসার্চ করে দেশেই স্যাটেলাইট বানাবে সেদিন আমরা বুক ফুলাইয়া বলতে পারব যে আমরা কিছু একটা হইছি।
বিজ্ঞান কে আপন করেন , দুনিয়া আপনার কথায় নাচবে।

Comments

Popular posts from this blog

ওহাবী কওমী মাদরাসার ত্রিশালে "মাদ্রাসা শিক্ষকের যৌন হয়রানির ঘটনায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা"শিক্ষক গ্রেফতার "

যে নাম গুলো ইসলামে হারাম, ভুলেও আপনার সন্তানের এই নাম গুলো রাখবেন না

দৌলতপুরে মাদক ব্যবসায়ী টুটুল ইয়াবা সহ আটক