বেশ কয়েকজন ইনবক্স করলেন। ছবিটা দেখে অামি চমকে উঠেছি। শরিফুল হাসান।
বেশ কয়েকজন ইনবক্স করলেন। ছবিটা দেখে অামি চমকে উঠেছি। বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম। অামার ছবি অাছে বলে নয়, অামি শাহবাগের সময় জামায়াত শিবিরের এমন পোষ্টার দেখেছি যেখানে অামাকে গালিগালাজ করা হয়েছে। এখনো তারা করে। কয়েকদিন অাগে হাস্যকর ভুয়া স্ক্রিনশট দেখলাম অামার। এসবে অামার মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু অামি ভাবছি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিজেদের দাবি করে ওরা কাদের অপমান করছে?
ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার ওদের টার্গেট যিনি নিজে মুক্তিযোদ্ধা, যাকে দেখলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী লাল গালিচা ছেড়ে দেন? ওরা কাকে অপমান করছে? মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ব্যারিষ্টার অামিরুল ইসলামকে? মুক্তিযোদ্ধা অাকবর অালী খানকে?
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অাসলে কী? অামি তো মনে করি সৎভাবে বাঁচা, সত্যের জন্য দেশের জন্য লড়াই করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অামি অামার সারাজীবনে কখনো কোনদিন মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটা বাজে শব্দও বলিনি। এমনকি অামার ভাবনাতেও কখনো অাসেনি। কারণ অামার রক্তে তা নেই।
কোটা সংস্কার অান্দোলনের সময় যাদেরকে দেখেছি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাজে শব্দ বলেছে সাথে সাথে প্রতিবাদ করেছি। অামার সারাজীবনের অাফসোস মুক্তিযুদ্ধের সময় অামার জন্ম হয়নি, অামি মুক্তিযোদ্ধা নই। অার অামার পরিবারের খোঁজ নেন। বাংলাদেশ নিয়ে অামাদের সব স্বপ্ন সেটা কী অামাদের অপরাধ?
অাপনারা যারা অাজ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যারকে অপমান করছেন তারা কী মহান মুক্তিযুদ্ধে স্যারের ভূমিকা সম্পর্কে জানেন? জানেন কী বাংলাদেশ থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে ভারতে গিয়ে সব শরনার্থীদের নিয়ে সমিতি গড়ে অর্থ সাহায্যের জন্য কাজ করেছিলেন তিনি? জানেন কী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশি বিদেশি বুদ্ধিজীবীদের কাছে তিনি মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন।
অাপনারা জানেন কী সংবিধানের যে বাংলা ভাষা তার জন্য কাজ করেছেন অানিসুজ্জামান স্যার। সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে কে অাদালতে স্বাক্ষ্য দিয়েছে? সারাটা জীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য লড়াই করলেন অাজ তার কাছ থেকে অাপনারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন কথা শুনতে চান না। কিন্তু কেন?
আনিসুজ্জামান স্যারের অপরাধ স্যার বলেছেন, বর্তমানে ১০ শতাংশের বেশি কোটা থাকা উচিত নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের নামে যে কোটা আছে, সেটা এখন আর থাকা উচিত নয়। এটা মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা।’ স্যারের কথাগুলো কী খুব অযৌক্তিক?
অাগেও বলেছি এখনো বলি মুক্তিযোদ্ধা কোটা অার মুক্তিযুদ্ধ ভিন্ন বিষয়। মুক্তিযুদ্ধ ছিল স্বাধীনতার জন্য অামাদের সার্বজনীন লড়াই অার মুক্তিযোদ্ধা কোটা মানে সনদধারীদের স্বার্থ যেখানে অসংখ্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা অাছে। অার মুক্তিযোদ্ধা বা তার সন্তানরা কোটা পেতে পারেন কিন্তু তার নাতি নাতনিদের কোটা দেওয়া কোনভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়। অার সনদধারীদের চেয়েও শহীদের সন্তান বা অসহায় মুক্তিযোদ্ধারা কেন কোটার সুবিধা পাবে না?
আরেক মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম অাপনারা অপমান করছেন কারণ তিনি বলেছেন, নিয়োগ পদ্ধতি হওয়া উচিত প্রতিযোগিতামূলক। সেখানে সবচেয়ে যোগ্য জনবল দরকার। সেখানে কোটা থাকা উচিত নয়। আর কোটার জন্য কেউ যুদ্ধ করেনি। অার এই কারণেই অাপনারা ক্ষেপেছেন?
অাপনারা যারা ব্যারিষ্টার অামিরুল ইসলামকে গালি দিচ্ছেন জানেন কী তার সম্পর্কে? জানেন কী মুক্তিযুদ্ধের ঘোষনা পত্রের রচয়িতা এই অামিরুল ইসলাম? বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা, স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিসংগ্রামের শীর্ষস্থানীয় সংগঠক হলেন জনাব এম আমীর-উল-ইসলাম।
জানেন কী পাকিস্তানি জান্তা যখন বঙ্গবন্ধু সহ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে, তখন অামিরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য বৃটেনের রানী আইন উপদেষ্টা স্যার টমাস উইলিয়ামকে ঢাকায় আনতে বিশেষ ভুমিকা রাখেন এবং তার প্রধান সহকারী হিসেবে মামলা পরিচালনায় সহায়তা করেন।
অারেকটু জানুন। জানুন মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননে সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানের সকল আয়োজনের দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছিলো ব্যারিস্টার এম,আমীর-উল-ইসলামকে। জানুন মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রামে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠায় জনাব তাজউদ্দীনকে সাথে নিয়ে ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লি এবং শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে আলোচনা ও মুজিবনগরে সরকার গঠন করে একজন সুদক্ষ সংগঠক হিসেবে কাজ করেন তিনি।
আকবর আলী স্যারকে চেনেন? যারা শুধুই সুশীল মনে করে গালি দেন তাদের মনে করিয়ে দেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি হবিগঞ্জের মহুকুমা প্রশাসক বা এসডিও ছিলেন এবং যুদ্ধকালীন সময়ে সক্রিয়ভাবে মুজিবনগর সরকারের সাথে কাজ করেন। জানেন কী পাকিস্তান বাহিনীর আক্রমণ শুরু হলে হবিগঞ্জ পুলিশের অস্ত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অণুপ্রাণিত করেন? জানেন কী মুক্তিযুদ্ধ কালে পাকিস্তান সরকার অনুপস্থিতিতে তাঁর বিচার করে এবং ১৪ বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
অাপনারা যারা অাজ অাজ বড় বড় কথা বলেন শোনেন মুজিবনগর সরকার তখনো প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় অনেক সরকারি কর্মচারীই লিখিত অনুমতি ছাড়া অস্ত্র যোগান দিতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু আকবর আলী খান নিজ হাতে লিখিত আদেশ তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, খাদ্য ও অর্থ যোগান দেবার আদেশ প্রদান করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তহবিল তৈরি করতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা উঠিয়ে ট্রাকে করে আগরতলায় পৌছে দেন। অাজকে আকবর আলী খান খারাপ কারণ তিনি কোটার সংস্কার চান তাই না?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যারকে অপমান করছেন? কিন্তু কেন? শুধু ভিন্নমতের বলে? সিরাজুল ইসলাম স্যারের মতো লেখক, প্রাবন্ধিক, শিক্ষক কোথায় পাবেন? বাক্স্বাধীনতা, মানবিক অধিকার, পরিবেশ সুরক্ষা, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার বিষয়ক আন্দোলনের পুরোধা সিরাজ স্যার।
পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক স্যারকে অপমান করছেন কেন? জানেন কী তিনি মনে প্রাণে মুক্তিযুদ্ধের মানুষ? জানেন কী সাংবিধানিক বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষের যেখানে অাস্থা নেই সেখানে এই প্রজন্ম পিএসসির ওপর অাস্থা রাখছে? স্যারের অপরাধ তিনি বিসিএসে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করেছেন? স্যারের অপরাধ কোটার প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা থেকে নিয়োগ দিচ্ছেন?
কলামিষ্ট সৈয়দ অাবুল মকসুদকে গালি দিচ্ছেন বিএনপি জামায়াতের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় যাকে বিএসএস ছাড়তে হয়েছে? যিনি সারাটাজীবন সৎ সাধারণ জীবন যাপন করেছেন? স্থপতি মোবাশ্বার হাসানকে গালি দিচ্ছেন? গালি দিচ্ছেন সৌমিত্র শেখরকে? মৌসুমি নামের যে সাংবাদিককে গালি দিচ্ছেন জানেন কী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মেয়েটা রাজপথে ছিল।
অাপনারা অাসলে বলেন তো অাপনারা চান কী? বলেন তো সনদধারীদের কোটা সুবিধা দিলেই মুক্তিযুদ্ধের সব চেতনা বাস্তবায়ন হয়ে যায় তাই না? অাচ্ছা অাপনারা কখনো কোনদিন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের বিরুদ্ধে কেন বলেন না? কেন কোনদিন বলেন না ৩০ লাখ শহীদের সন্তান, অসহায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা কেন কোটা পাবে না?
পরিশেষে একটা কথাই বলবো, অাপনারা যারা কোটার সংস্কার চান তারা দয়া করে মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করবেন না। কারণ মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করা মানে দেশকে অপমান। অার যারা মনে করেন কোটা রাখাতেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাদের বলবো অাগে শুদ্ধ বাংলা শিখুন। এরপর অামাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটু জানুন, পড়ুন। কারণ অামাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল সাম্য।
অারেকটা কথা মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে অার যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে অামি শুধু ফেসবুকে যা লিখেছি একজন কোটাধারী তার অর্ধেক লিখেছে প্রমাণ করতে পারবেন? দেখাতে পারবেন? নাকি অাপনাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে কোটার সনদ? অাসলেই কী এই ব্যানারধারী মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম?
সৃষ্টিকর্তা অামাদের সবাইকে বিবেকবোধ দিন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠুক লাল সবুজের বাংলাদেশ।
Comments
Post a Comment